সুন্দরবনে বাঘের থাবা থেকে বেঁচে ফিরলেন লাল মিয়া!

মেহেদী হাসান, করমজল (সুন্দরবন) থেকে ফিরে:-
প্রাণীদের আক্রমণের সবচেয়ে ভয়াবহতম হিসেবে বাঘের আক্রমণকে ধরা হয়। যদিও এটা সম্পুর্ণ বেআইনি যখন আপনি যথাযথ প্রস্তুতি এবং অনুমতি ছাড়া বনের ভেতর ঢুকবেন, কিন্তু কিছু মানুষ এর মাধ্যমেই নিজেদের জীবিকা আহরণ করে বেচে থাকে। এমনি এক মানুষ হলেন  মোংলার কানাইনগর গুচ্ছগ্রামের লাল মিয়া যিনি সুন্দরবনের পাশের একটা গ্রামে বসবাস করেন। আমরা সবাই জানি সুন্দরবন হলো বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি। আর বাঘের আক্রমণের গল্পের জন্য এই বন বেশ বিখ্যাত। লাল মিয়া এমন এক আক্রমণের শিকার এবং সেখান থেকে বেচে ফিরেছেন।
লাল মিয়া জানান, ঘটনাটা শনিবার (২৫ আগস্ট) ঘটে। সকালে নৌকা নিয়ে তার বাড়ি মোংলার কানাইনগর গুচ্ছগ্রাম থেকে করমজল খালে আসেন। করমজল ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের বিপরীত পাড়ে ঘাস কাটা শুরু করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘাস কেটে দীর্ঘ বছর ধরে তিনি করমজলে আসা পর্যটকদের কাছে হরিণকে খাওয়ানোর জন্য বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, সেদিন ঘাস কাটতে কাটতে বাঘের মুখোমুখি হন। কখনই ধারণা করতে পারেননি এতো কাছে বাঘ থাকতে পারে। ভয়ে গা ছমছম করছিল। বাঘের ভয়ে দ্রুত ঘাস ও কাঁচি ফেলে পেছন খালের চরে লাফ দেন। গায়ের সব শক্তি দিয়ে নৌকা ঠেলা দিয়ে উঠে পড়েন। বৈঠা পুঁতে বেঁধে রাখা নৌকা মুহূর্তেই খালের মাঝখানে চলে যায়।
লাল মিয়া জানান, বাঘটি মূলত বিশ্রাম নিচ্ছিল। এসময় মশা-মাছি মাঝারি আকারের বাঘটিকে বিরক্ত করছিলো।
তার ভাষ্য মতে, হেই দিনের কতা কইতে গেলে গায়ের রক্ত ঠান্ডা অইয়ে যায়। পরাণে পানি থাহে না। বুকটা কাইপ্পা উঠে। বাঘটা যদি শুইয়ে না থাকতো তাইলে কাম সারা। এহন আমি বাঘের পেটে থাকতাম। আল্লায় বাঁচাইছে। তা না অইলে বাঘের তিন-চার হাত দূর থেকে কেউ বাইচে আইতে পারে না।
গ্রামের ফিরে গিয়ে লাল মিয়ার বাঘের মুখ থেকে বেঁচে যাওয়ার গল্প শুনে সবাই অবাক হন। তার সাত ছেলে-মেয়ে তাকে আর বনের মধ্যে গিয়ে ঘাস কাটতে নিষেধ করেন।
লাল মিয়া জানান, করমজলে পর্যটকদের কাছে ঘাস বিক্রি করে তার সংসার চলে। সেই দিনের পর থেকে এখন আর বেশি ভেতরে যান না। নৌকা বসে খাল পাড় থেকে যা পান তাই কেটে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, জঙ্গলে বহু বছর আমার আসা-যাওয়া। আগেও বাঘ দেখছি। তয় তা দূর থেকে। এবারই প্রথম এত্ত কাছদে দেখছি।লাল মিয়ার বাঘের কাছ থেকে ফিরে আসার কথা জানেন করমজল প্রজনন কেন্দ্রের কর্মচারী-কর্মকর্তারাও।
এ বিষয়ে করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, করমজল এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতি দিনই বাঘ হানা দিচ্ছে। এতে বাঘ আতঙ্ক বাড়ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment